দেশে ৪১ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। তাপমাত্রার পরিমাণও ছিল ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ওলট-পালট হচ্ছে ঋতুবৈচিত্র। এতে কৃষিপণ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

খাতা-কলমে আষাঢ়-শ্রাবণ ভরা বর্ষণের ঋতু। কিন্তু শ্রাবণ শেষ হলেও প্রকৃতিতে এখনো দেখা মেলেনি প্রতীক্ষিত বৃষ্টির। এমন বর্ষাকালে মানুষকে সহ্য করতে হচ্ছে ভ্যাপসা গরম।

ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে দেশের জলবায়ু। দীর্ঘ হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। বৃষ্টির অভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবাদি জমি ফেটে চৌচির। আবার কখনও অসময়ের বৃষ্টি ও বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে মাঠঘাট-প্রান্তর।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ৪১ বছরের বৃষ্টিপাত রেকর্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে এই বছরের জুলাইয়ে। গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২১১ মি.মি। ৩০ বছরের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় যা ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম। একই সাথে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অনিয়মিত বৃষ্টি ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ থাকার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে ঋতুবৈচিত্র যেমন ওলট-পালট হচ্ছে, একই সাথে কৃষিপণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কাও দেখছেন তারা।

আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘পর্যবেক্ষণে মনে হয়, এর কারণে কৃষি ফসলের যে জীবনকাল সেই জীবনকাল কিছুটা সংক্ষিপ্ত হবে। এর ফলে উৎপাদন কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী সিজন শীতকালে যেসব ফসল আগাম লাগানোর সুযোগ ছিল সেটিও পিছিয়ে যাবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা ও খরা মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা।

বুয়েট পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইউনিটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জুন মাসে অনেক বেশি বৃষ্টি দেখলাম, সিলেটে মারাত্মক ধরনের বন্যা দেখলাম।

আবার জুলাই মাসে এসে দেখলাম খড়া। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মাটির নীচে চলে যাচ্ছে এবং ডোবা, নদীনালা, খালবিল শুকিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য যে পশুপাশি, প্রাণী তাদের উপরও নেগেটিভ প্রভাব পড়ছে।’

পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশি করে গাছ লাগানোসহ বায়ুমণ্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরন সীমিত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

কলমকথা/এমএনহাসান